চট্টগ্রাম, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪:
ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে বিভিন্ন সময়ে হত্যার বিষয় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, উভয় সীমান্তে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে। উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন সীমান্ত পার হয়ে শত্রুতা উদ্ধার করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত করে থাকে। ভারত আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে আমরাও এর প্রতি উত্তর দিচ্ছি। তবে তাদের (ভারত) মিডিয়াগুলো প্রচুর মিথ্যাচার করছে। এর প্রতি উত্তর কিন্ত আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোও দিচ্ছে। আশা করি আগামীতেও দেশের মিডিয়াগুলো মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার থাকবে। আর বিজিবির সদস্যদের আদেশ দেওয়া আছে, তারা যে কোন অবস্থায় যাতে পিঠ না দেখাই, সকল সমস্যা সাহসে সাথে মোকাবেলা করে।
তিনি মঙ্গলবার (৩১ডিসেম্বর) সকালে সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বায়তুল ইজ্জতস্থ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশেল (বিজিবি) ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
মায়ানমার সীমান্তের বর্তমান অবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে কোন উত্তেজনা নাই। বর্ডার সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। মায়ানমার আর্মি ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধে আরকান আর্মি কিছু জায়গা দখল করে নিয়েছে। উভয়ের সাথে আমাদের যোগাযোগ চলছে।
নতুন সৃষ্টি হওয়া প্রতিবেশী আরকান আর্মির সাথে সম্পর্ক কেমন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এক সময় বন্ধু শত্রু হয়, শত্রু বন্ধু হয়। এ সরকার কোন অবস্থায় কার সাথে কি রকম আচরণ করতে হবে, সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে।
মায়ানমার সীমান্তে ভূ-নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, মায়ানমারের নাফ নদী বাংলাদেশের ব্যবহার করতে হয়। তবে তারা বিজিবি ও কোস্ট গার্ডকে সেন্টমার্টিন যেতে বাধা দেন না। তবে বড় বড় জাহাজ যেতে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে তাদের সাথে কথা চলছে, আশা করি অচিরেই এর একটা সমাধান আসবে।
এর আগে সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশ্য বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তোমরা বিজিবি’র সুনাম ও সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। এছাড়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহিয়সী নারীদের অংশগ্রহণ, অবিস্মরণীয় অবদান ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনও পিছ পা হয় না, সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, আনুগত্য, নির্ভরযোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা, কর্মতৎপরতা, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলীর প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে এর ৪ মূলনীতি-মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র উপর অর্পিত যে কোন দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধান অতিথি ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবি’র ৮১৭জন অকূতোভয়বীর বিশেষ করে দুইজন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম, ৭৮ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি গত জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বিজিবি সদস্যসহ ছাত্র-জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হিসেবে বিজিবি আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশ প্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশের ৪ হাজার ৪২৭ কি.মি. দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্তভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ সব ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমনসহ দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সাথে পালন করে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, যে কোন দুর্যোগময় মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিজিবি বিশ্বস্ততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে সেবা ও কর্তব্য পরায়ণতার মাধ্যমে সমগ্র জাতির শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ, প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আইজিপি বাহারুল আলম, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সামরিক ও বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
কুচকাওয়াজে প্যারেড কমান্ডার ছিলেন মেজর কে এইচ ইমরান হাসনাইন। এবারের ব্যাচের সেরা রিক্রুট নির্বাচিত হন মো.নাঈম মন্ডল।
উল্লেখ্য, ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজে (বিজিটিসিএন্ডসি) শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘ ২৩ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।
শেষে বিজিবির প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবি’র সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।
ছবি ক্যাপ:সাতকানিয়ায় বাইতুল ইজ্জত বিজিবির ১০২ তম রিক্রুট ব্যাচের সেরাদের পুরস্কার প্রদান করছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা