চট্টগ্রাম,২৭ অক্টোবর,২০২৫:
স্তন ক্যান্সার বিশেষ করে মহিলাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নারীদের মধ্যে যত ক্যান্সার হয় তার মধ্যে বেশি হয় স্তন ক্যান্সার। দেশে প্রতি বছর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ১৩ হাজার নারী মধ্যে প্রায় অর্ধেক মারা যান। তবে আগেভাগে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে চিকিৎসা শুরু করলে এ ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান এবং পরিচালক, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ডা. শেফাতুজ্জাহান বলেছেন, ক্যান্সার এখন কম বয়সী মেয়েরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য তিনি নিয়মিত ঘরে নারীদের ক্যান্সার স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সারের সচেতনতার জন্য দু ধরনের কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেমন করণীয় আছে তেমনি মহিলাদেরও করণীয় রয়েছে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক বলেন, নারী ১৮ বছর বয়স থেকে স্তন ও বগল চেকআপ করতে হবে। প্রতি মাসে নিজে নিজে চেক করবে, ঋতুর সপ্তম দিনে। বয়সী নারীরা প্রতিবছর চেকআপ করবেন। তাদের চল্লিশ বছর বয়স থেকে প্রতিবছর মেমোগ্রাফি করতে হবে। নিজেই প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিনে ঋতুর সপ্তম দিনে অবশ্যই চেকআপ করবে। চেকআপে শরীরে চাকা থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
স্তন ক্যান্সার রোধে খাদ্যাভ্যাসে সতর্ক থাকা। ফাস্টফুড না খাওয়া, পিল বেশি না খাওয়া, ফরমালিনমুক্ত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। বলেন- সপ্তাহে তিন দিন ব্যায়াম করলে শরীরের পঞ্চাশ ভাগ ক্যান্সারের জীবাণু শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
পাশাপাশি পরিমিত ঘুমানো, পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন থাকা। নিজেকে সেল্ফ স্ক্রিনিং করা, বছরে একবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া। এসব কিছুর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি পর্যায়ে ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকতে পারে তিনি জানান।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মহিলাদের স্ক্রিনিং কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন করার পরামর্শ দেন মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের পরিচালক।
চিকিৎসা কেন্দ্র ও চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে স্কুল থেকে থানা ইউনিয়ন- উপজেলা পর্যায়ে সকল মহিলার কাছে ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং করার প্রয়োজনীতা মেয়েদের কাছে তুলে ধরতে হবে। সবাইকে জানাতে হবে কেন স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব ক্যান্সার স্ক্র্যানিং প্রটোকলে সব নাগরিকদের নিয়ে আসা। এজন্য রাষ্ট্র এমন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যাতে মহিলারা বাধ্য হয়ে ক্যান্সার স্ক্রিনিং করতে আসে। এতে আগেভাগে ক্যান্সার ধরা পড়বে।
এখন মহিলারা এ ব্যাপারে সচেতন নয় বলে জানান তিনি। অসচেতনতার কারণে মেয়েরা চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করে। তখন ভালো হওয়ার সুযোগ কমে যায়।
চল্লিশ বছর বয়স হলে মহিলাদের বছরে একবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ক্যান্সার স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেন তিনি। এতে বেশি খরচ নেই। তিনি বলেন, শুধু তাকে ডাক্তারের ভিজিটটা দিতে হবে। এর বাইরে কোনো খরচ নেই। তবে খারাপ কিছু ধরা পড়লে সেক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা করতে হবে।প্রাথমিকভাবে কোনো খরচ নেই। এর বাইরে খরচের ঝামেলা দেখলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আরো হাসপাতালে কম খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালেও মাত্র ১০০ টাকায় ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।
আগে বয়স্কদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি ধরা পড়ত, এখন ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হচ্ছে কম বয়সের তরুণী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার পাওয়া যাচ্ছে। তরুণী মেয়েদের অ্যালকোহল, ধূমপান, ফাস্টফুড, কম ঘুমানো, পিল খাওয়ার কারণে ক্যান্সার হচ্ছে বলে জানান ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শেফাতুজ্জাহান।
তবে চট্টগ্রাম ব্রেস্ট ক্যান্সার সহ সব ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসার আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি পিসিএল-কে বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য অপারেশনের ডাক্তার, ভালো রেডিওথেরাপি মেশিন, কেমোথেরাপির ঔষধ প্রয়োজন হয়। এগুলোর সবই চট্টগ্রামে আছে। চিকিৎসার জন্য শুধু বিদেশ কেন, চট্টগ্রামের বাইরে ঢাকাও যেতে হবে না।
ক্যান্সার চিকিৎসার নব্বই শতাংশ রোগীর জন্য চট্টগ্রাম এখন স্বয়ং সম্পূর্ণ।
তবে চিকিৎসা ও যন্ত্রপাতি যাই থাকুক -স্তন ক্যান্সার সহ সব ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করতে হবে। এজন্যই অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসাবে পালন করা হয়। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সব বয়সের নারীরা যাতে সচেতন হয়। ১৮ বছর বয়স থেকে মেয়েদের নিজেদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। স্তন ও বগলের নিচে চাকার মত কোন কিছু থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।








