চট্টগ্রাম, ১৯ মার্চ,২০২২ :
গত তিন দিনের টানা ছুটিতে সারা দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস মিলিয়ে বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি ও শবেবরাত মিলিয়ে তিন দিন ছুটি ছিল। যে কারণে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, সীতাকু- সহ সকল পর্যটন স্পটগুলোতে তিন দিনের ছুটি উপভোগের জন্য ভিড় করে মানুষ। তবে সীতাকু-ের পাহাড়ে বেড়াতে আসা প্রায় ১৭ জন ছাত্রছাত্রী পাহাড়ে ছিনতাইকারীদে;ও কবলে পড়েছে বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ছিল পর্যটকদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। সৈকতে ঘোরাঘুরি, সমুদ্রস্নান, মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণ, সূর্যাস্ত দেখা নিয়ে কক্সবাজারে ব্যস্ত পর্য
টকদের ভিড়ি ছিল সবচেয়ে বেশি।
রাঙামাটির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকরা ঝুলন্ত সেতু, পুলিশের পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক রির্সোট সহ লঞ্চে চড়ে কাপ্তাই হ্রদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেখানে সাজেকে ছিল পর্য
টকদের সবচেয়ে বেশি সমাগম। কংলাক পাহাড়, ঐতিহ্যবাহী লুসাই ভিলেজ আর সাজেকের পাহাড়ে পর্য টকরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়িয়ছে।
পার্বত্য জনপদ বান্দরবান পর্যটকের পদচারণার মুখর হয়ে উঠে। পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন নগরী বান্দরবানের পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক অপরূপ রূপ মুগ্ধ করেছে পর্যটকদের। বৃহস্পতিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ও শনিবার পবিত্র শবে বরাত সরকারি ছুটি থাকায় টানা তিন দিনের ছুটিতে প্রায় কয়েক হাজার পর্যটকের ঢল নেমেছে বান্দরবানে। মুখরিত হয়ে উঠে জেলার পর্যটন স্পট ও রিসোর্টগুলো। বান্দরবানে পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। বান্দরবানে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল সবগুলো হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ এক মাস আগে থেকে বুকিং হয়ে রয়েছে। বান্দরবানে হোটেল-মোটেলে কোন সিট খালি ছিল না। অনেক পর্যটক রুম না পেয়ে ফিরে গেছে। দীর্ঘ ৩টি বছর করোনার প্রভাবে নার্ভিশ^াস উঠা পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বান্দরবানের আকর্ষণীয় মেঘলা ঝুলন্ত সেতু, নীলাচল, প্রান্তিক লেক, নীলগিরি, চিম্বুক, রুমা, বগালেক, নাফা খুমসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে।
হোটেল-মোটেল মালিকরা বলেন, টানা ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। আশা করছে আগামী দিনগুলোতে পর্যটকের আগমন আরো বাড়বে। ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় পর্যটকের বাড়তি চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও হোটেল-মোটেল, রেস্ট হাউজ এবং গেস্টহাউসগুলোতে কোনো সিট খালি নেই। এক মাস আগেই শহরের বিভিন্ন হোটেল-মোটেলগুলো বুকিং হয়ে গেছে।
ভ্রমণে আসা পর্যটকরা বলেন, দেশের অন্যান্য পর্যটন স্পটের তুলনায় বান্দরবান অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানকার পাহাড়ি প্রকৃতিও চমৎকার। পর্যটকদের জন্য প্রচুর নিরাপত্তা দেখা যাচ্ছে। নির্ভয়ে এখানে ঘোরাফেরা করা যাচ্ছে। পর্যটকদের বসার জন্য নতুন নতুন স্থাপনা দেখা যাচ্ছে।
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশ ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বান্দরবানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে। ভ্রমণের পাশাপাশি পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হবে, ছোট বাচ্চাদের নিজের সঙ্গে রাখা এবং যেকোনো পর্যটন স্পট ভ্রমণের সময় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা মেনে চলা উচিত।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, বান্দরবানে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য জেলা প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। বিশেষ করে পর্যটকরা বেড়াতে এসে যাতে কোনো ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকে নজরদারি রয়েছে প্রশাসনের। তিনি বলেন, পর্যটন স্পটগুলোতে পূর্বের তুলনায় সেবা বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে। যাতে পর্যটকেরা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। তিনি আরো বলেন, বান্দরবানে নিরাপত্তার কোন সমস্যা নেই। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়াতে পর্যটনখাতে অনেকগুলো পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
সীতাকু-: দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সীতাকু- উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট দেখতে আসা পথ হারানো ও ছিনতাইকারীর কবলে পড়া ১৭ পর্যটককে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পর্যটকরা সর্বশেষ তারা ট্রাভেলিং করে রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে সীতাকু- পৌরসদর পন্থিছিলা ঝরঝরি ঝর্নার দিকে রওনা হন। সেখানে গিয়ে তারা ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মোবাইল, টাকাপয়সা হারান। এরপর তারা পথ হারিয়ে সরকারি জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ প্রায় ৩ ঘন্টা স্থানীয়দের সহযোগিতায় পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাদের উদ্ধার করেন। তবে উদ্ধার পরবর্তী পর্যটকরা কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ অথবা মামলা করবে না বলে স্ব স্ব এলাকায় চলে যান।
জানা যায়, ঢাকা, টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও কক্সবাজার এলাকায় বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া ১২ জন ছাত্র ও ৫ জন ছাত্রীসহ মোট ১৭ জনের একটি দল সীতাকু-ের বিভিন্ন পর্যটন স্থান দেখে সর্বশেষ পন্থিছিলা পাহাড়ি এলাকার ঝরঝরি ঝরনা দেখতে আসেন। সেখানে তারা ট্রাভেলিং অথবা নাইট ক্যাম্পিং এর নামে পাহাড়ে তাঁবু টাঙিয়ে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরই মধ্যে পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন চারজন। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে খুঁজতে গিয়ে বিপদে পড়ে যান। এরপর তারা দুটি পাহাড় অতিক্রম করে ঝরঝরি ঝর্নার সন্ধান পান এবং সেখানে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। মোবাইল-টাকা পয়সা ছিনতাই হওয়ার পর আসার পথও হারিয়ে ফেলেন। অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন তারা। পরে একজনের কাছে লুকিয়ে রাখা একটি মোবাইল ফোন দিয়ে জরুরি সেবা সংস্থা ৯৯৯-এ ফোন করে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ৯৯৯-এ সীতাকু- থানা পুলিশকে অবগত করেন। এরপর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইলিয়াছ মাহমুদ ফোর্স নিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় তিন ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে ১৭ পর্যটককে অক্ষত উদ্ধার করেন।
নরসিংদী জেলা থেকে আসা রুমান নামে এক পর্যটক বলেন, কয়েকটা পর্যটন স্থান দেখার পর আমরা ঝরঝরি ঝর্নায় যায়। রান্না করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে পড়ায় আমরা রাত্রি যাপনের চিন্তা করি। কিন্ত এরই মধ্যে ৭ জনের একটি ডাকাত দল আমাদের আক্রমণ করে। ডাকাত দলের কাছে দেশি পাইপ গান, গ্যাং চুরি ও দা ছিল। প্রথমে ডাকাতরা আমাদের কাছে এক লক্ষ টাকা দাবি করে। এরমধ্যে আমরা বলি কোত্থেকে এত টাকা দিব। ডাকাতরা আমাদের দুইজনকে ধরে নিয়ে যায়, আমাদের কয়েকজনকে মারধর করে। এই ফাঁকে আমরা বিভিন্নভাবে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে জানাজানি করি, ডাকাত দলও বিষয়টি টের পেয়ে আমাদের কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা ও ১৩টি মোবাইল নিয়ে চলে যায়। পরে আমাদের একজনের কাছে লুকিয়ে রাখা একটি মোবাইল থেকে জরুরি সেবা সংস্থা ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চায়। এরপর প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে স্ব স্ব এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
সীতাকু- মডেল থানার ওসি মোঃ আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দিনের বেলায় পর্যটকরা ঝরঝরি ঝর্না দেখতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসে। এরপর তারা রাত্রি যাপনের চেষ্টা করে। কিন্তু কয়েকজনকে একা পেয়ে ছিনতাইকারীরা মোবাইল ও টাকা নিয়ে যায়। এরপর তারা রাতে গহীন পাহাড় থেকে আসতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলে, জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে আমরা প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের ১৭ জনকে অক্ষত উদ্ধার করি। এসব ঝর্নায় সাধারণত খুব কম পর্যটক যায়। আর গেলেও দিনের আলোয় ফিরে আসে।
Discussion about this post