চট্টগ্রাম, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২:
খাদ্যের অভাবে পাহাড়ে দাপিয়ে বেড়ানো বন্য হাতির আক্রমণে বান্দরবানে ৫ বছরে ২৫ জন মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়ে দিন কাটাচ্ছে শতাধিক মানুষ। হাতির আক্রমণে মৃত্যুর মিছিলে অনেকে হারিয়েছে পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে। বন্য হাতি উপদ্রুত এলাকার মানুষের আতঙ্কের সীমা থাকে না রাত নামলে। লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও সদর উপজেলাগুলোতে বন্য হাতির আক্রমণে সবচেয়ে বেশি। দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে হাতির আক্রমণ।
বনবিভাগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বান্দরবানের লামার সরই, ফাইতং, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, নাইক্ষ্যংছড়ির আশারতলি, সোনাইছড়ি দৌছড়ি ফুলতলি, বাইশারী এবং সদর উপজেলার হলুদিয়া, কদুখোলা, ভাগ্যকুল এবং গয়ালমারা এলাকাসহ বন্যহাতির আক্রমণে প্রায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে শতাধিক।
সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন জানায়, প্রতিরাতেই বন্যহাতির পাল লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।ক্ষেতÑখামার ও বসতবাড়িতে দফায় দাফায় হামলা চালানোর ফলে পাহাড়ি এলাকার মানুষকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
ক্ষেত-খামার,বাগান ও বসতবাড়িতে হানাদিয়ে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি করছে বন্যহাতির দল। আতংকগ্রস্ত বহু পাড়া-গ্রামের পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
বন্যহাতির অবাধ বিচরণের কারণে দুর্গম এলাকার শত শত পরিবার জীবন-জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে মারাত্মক সংকটে পড়েছেন।
দুর্গম এলাকাবাসীর মতে, বন্যহাতির হামলা থেকে রক্ষা পেতে পদক্ষেপ দাবি করে প্রশাসন ও বন বিভাগের কাছে বহুবার আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু জানমাল সুরক্ষায় এবং বন্যহাতির তা-ব রুখতে কোন মহলই স্থায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।বন্যহাতির হামলায় নিহত-আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে বারাবরই কিছু ত্রাণ সাহায্যর পাশাপাশি অর্থ সহায়তা দিয়ে সান্তͦনা দেয় প্রশাসন। পাহাড়ি এলাকার মানুষের কৃষি ফসলসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করেন। তবে হাতির পালের সামনে যাকে পড়তে হয়েছে তাকেই মৃত্যুবরণ করতে অথবা গুরুতর আহত হয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মোরশেদ বলেন,মানুষে জানমাল রক্ষার্থে দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। হাতির রোড ও করিডোর কি ভাবে সংরক্ষণ করা যায় নতুন একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়েছি এবং আশা রাখি আগামী অর্থ বছরে প্রকল্পটি চালু হলে সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও সহযোগিতা করা হবে এবং মানুষ সুফল পাবে।
তবে বন বিভাগ হাতির জোন এলাকায় হিসেবে মানুষের মাঝে সচেতনতা এবং বিভিন্ন বিষয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এলাকাবাসী উপকৃত হতো।
লামা সরই আন্দারি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক আশা ত্রিপুরা বলেন, বিভিন্ন স্থানে হাতির পাল রাতে এবং দিনেও আসে। তবে হাতির পাল খাওয়ার সন্ধানে আসে, কিন্তু তাদের তাড়িযে দেওয়া হয়। কারণ যেসব এলাকায় হাতির বিচারণ সেখানে এখন রাবার বাগান, বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বন বিভাগ যদি হাতি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন থাকেন তাহলে এলাকাবাসী নিরাপদে থাকতে পারবেন।
বান্দরবান প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্ছু মনে করেন, পাহাড় মানেই জীব বৈচিত্র্যে অন্যরকম এক রাজ্য। যেখানে থাকবে শুধুই জীব-জন্তু, পশু-পাখি। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাহাড়ে যখন মানুষের বিচরণ ঘটলো, ঠিক তখনই বিলুপ্ত হতে শুরু হলো জীব বৈচিত্র্য। বন উজাড় করা পশু-পাখি শিকারসহ মানুষের নানা রকম কর্মকান্ডে পাহাড়ে দাপিয়ে বেড়ানো হাতি মানুষের অত্যাচারে এখন ক্ষুব্ধ।
তিনি বলেন, পাহাড়ে যেখানে হাতির বসবাস সেখানে এখন বাগান বাড়ি হয়ে গেছে। যার কারণে হাতি এখন লোকালয়ে নেমে এসে মানুষের ব্যাপক ফসালাদি নষ্ট করছে। এবং গেল ৫ বছরে প্রায় ২৫জন মানুষ মারা গিয়েছে।
তিনি বলেন, মৃত্যুর পর সরকারি যে অনুদান দেওয়া হয় এই টাকাটা যথেষ্ট নয়,তবে সরকারের পাশাপাশি কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা কোন এনজিও এগিয়ে আসলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো উপকৃত হবে।
লামা ডুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম বলেন,গেল ৫বছরে নিহত ও আহত এবং ফসলের ক্ষতি বাবত ৫২লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ে খাদ্য না পেয়ে বন্য হাতি দল লোকালয়ে নেমে এসে ফসলের ক্ষতি করে। তবে বন্য হাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, হাতিকে হাতির মত চলতে দিতে হবে। হাতির চলাচলে রাস্তায় বাধা দেওয়া হলে তখনই হাতি আক্রমণ করে। তারপরেও জনসাধারণের মাঝে সচেতনতার বিষয়ে বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।ছবি: সংগ্রহ
Discussion about this post