বাঙালি জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য দীর্ঘ। আমি আদি আলোচনায় যাব না। পরিবার সৃষ্টি পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির মধ্যে আছে। কিন্তু বাঙালি পরিবারের সাজানো, শালীন সৌন্দর্য্য অন্য জাতির মধ্যে নেই। আজ থেকে চল্লিশ / পঞ্চাশ বছর আগেও এ সৌন্দর্যের সৃজন- সংসারবাগান প্রতিটি পরিবারে ছিল। একান্নবর্তী বলেন আর যৌথ বলেন পূর্ব পুরুষের ধারাবাহিকতায় আমাদের ছিল পারিবারিক অলিখিত এক সংবিধান। মা ছিল ঘরের প্রধান। বাবা ছিলেন বাড়ির বাইরে সকল কর্মের নিয়ন্ত্রণ কর্তা। যে বাড়িতে বাবা মারা গেছেন সে বাড়িতে বড় ভাই বাবার ভূমিকা পালন করতেন। মা মারা গেলে বড় ভাইয়ের বৌ প্রধান। বাবা মারা গেলে মা যৌবন থাকলেও সন্তানদের মুখ চেয়ে দ্বিতীয় বিয়েতে যায়নি। সন্তান ফেলে ২য় বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে বাঙালি পরিবারে সে দিনে নেই বললে চলে। মা মারা গেলে পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করেছে তবে সন্তান বড় হলে সময় সুযোগ থাকার পরও বিয়ে করেনি এমন পুরুষ সমাজে খুঁজলে অহরহ পাওয়া যাবে। যৌথ পরিবারে ছোট ভাইয়ের বৌ স্বামীর বড় ভাইদের শ্বশুরের চেয়ে বেশি সম্মান করতো এবং সামনে এসে কথা বলত না আর বড় ভাইয়ের বৌ দেবরের প্রতি মাতৃতুল্য স্নেহ ভালোবাসা দেখাতো। বয়স অনুপাতে এলাকায় যার যার সম্মান নিয়ে চলাফেরা করতো। বড়দের প্রতি সম্মান করতে ছোটরা কোন দিন বলেনি ‘আমি কি তার খাই-পরি, সম্মান করতে হবে’? যা আজকাল বলে। এক বাড়িতে নাস্তা তৈরি করলে প্রতিবেশী সবাইকে পৌঁছে দিতেন এবং কাদের বাড়িতে পিঠা বানাবে তা আগে থেকে অন্যরা জানতেন। আজকের দিনে কেউ কারো খবর রাখি না। এটি হিন্দু ,মুসলিম, বৌদ্ধ নয় -সব বাঙালি পরিবারের কথা বললাম। মুসলমান বাঙালি পুরুষেরা অধিক বিয়ের ধর্মীয় অনুমতি পেয়েছে। তবুও অনাহুত একাধিক বিয়ে কোন বাঙালি পুরুষ করতে যায় না, যদি কেউ কোন কারণ ছাড়া করে থাকে- সে সমাজের মানুষের নিকট সম্মানজনক মূল্যায়ন থেকে বাদ পড়ে। তাই চারটি চার প্রসাদে রাখতে পারে এমন পুরুষদেরও আমরা একের অধিক বিয়ে করতে দেখিনা। বাঙালি সমাজের এ বিধান এখনো বাঙালিরা মানে, হয়তো দু’একজন ব্যতিক্রম। অথচ আরবের মুসলমান সত্তর /আশি বছর বয়সেও নাতির বয়সের নারীকে টাকার বিনিময়ে বিয়ে করে আনুষ্ঠানিক ভাবে। যা ওনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য সংস্কৃতি। আরবের এ সংস্কৃতিকে এখনো বাঙালি মুসলমানের সমাজে ধর্মের নাম দিয়েও গ্রহণ করাতে পারেনি। সংস্কৃতি আর ধর্ম এক নয়। এক হলে খাদ্য অভ্যাস আর পোশাক পরিচ্ছেদও আরবের মতো হয়ে যেতো। আরবের টিভি চ্যানেল বাঙালি মুসলমান কেউ দেখে না অথচ ভারতের সিরিয়ালে দুর্গা গনেশ ছবি থাকলেও মুসলমানদের পরিবারে দেখে আনন্দ পায়। যারা জাতি শব্দের ব্যাখ্যা যেভাবেই বিশ্লেষণ করুক না কেন, তার মাতৃভাষা এবং পূর্ব পুরুষের সংস্কৃতি তাকে তার আপন পথে নিয়ে যাবে। প্রতিটি পুরুষ অধিক সুন্দরী নারী বিয়ের কল্পনা মনে মনে করে থাকে কিন্তু তার জাতি ও বংশ মর্যাদা এবং সামাজিক ব্যক্তিত্ব তাকে বাধা প্রদান করে দমিত রাখে। ইচ্ছে করে যারা অধিক বিয়ে করেছে ওদেরতো আর ফাঁসি হয় না -মানুষ ভয়ে যেন করবে না? আমরা সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করি। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করি। বাঙালি সংস্কৃতি,আচার – আচরণ, পরিবারের ভাতৃত্বের বন্ধন পৃথিবীর আর কোন জাতি গোষ্ঠীতে নেই।
…..লেখক, গবেষক মো. নাছির উদ্দিনের ফেসবুক থেকে নেওয়া
Discussion about this post