চট্টগ্রাম, ৯ অক্টোবর, ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক চলছে । এটা মূলত রাজনৈতিক বিতর্ক। ইতিহাসকে নিয়ে শাসকরা সবসময়ই এই জাতীয় বিতর্ক করে থাকেন। ’৪৭ সাল থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ষাট দশক থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, ’৭১ সালের মার্চে এসে ভাসানী, মণিসিংহ, মোজাফ্ফর আহমদ, আতাউর রহমান খানসহ দেশের সব রাজনীতিবিদ, দলমত নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি যখন বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি জাতির প্রধান নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করে তার নির্দেশে আন্দোলনে রত তখন সেনাবাহিনীর একজন মেজর স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন এবং তাঁর ডাক শুনে বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো- বলে যে গল্প বলা হয় তা গল্প হিসেবেও দুর্বল। গল্পের প্লট থাকতে হয়, এই গল্পের প্লট খুবই দুর্বল।
আমাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়েছে ১৯ মার্চ থেকে। চূড়ান্ত প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা হয়েছে ২৫ মার্চ রাত ৯ টা থেকে চট্টগ্রাম ইপি আর এডজুডেন্ট ক্যাপ্টেন রফিকের হাত ধরে। তিনি ২৫ মার্চ রাত ৯ টায় হালিশহরে প্রায় ১৫০ জন অবাঙালি ইপিআর হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা করেন। ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায় বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে আরেকজনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে হানাদারদের আক্রমণ প্রতিহত করার একটি নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতারা বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ রাত ৮.৩০ মিনিটে ক্যাপ্টেন রফিকের কাছে পৌঁছানোর পরপরই তিনি আক্রমণের সূচনা করেন। ক্যাপ্টেন রফিক ২৩-২৪ মার্চ থেকেই আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে এক রেলওয়ে বাংলোতে তার দফতর স্থাপন করেছিলেন। মেজর জিয়া এইসব ঘটনার কিছুই জানতেন না। ফলে তিনি রাত ১১.৩০ মিনিটে রওয়ানা দেন বন্দরে সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাস করতে। যাওয়ার পথে রাত ১২ টার দিকে তিনি জানতে পারেন হানাদাররা তাকে মারার জন্য বন্দরে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো জানতে পারেন ক্যাপ্টেন রফিকের অভিযানের কথা। এরপর বেঙল রেজিমেন্টের অস্থায়ী ক্যাম্প ২ নং গেইটে আসেন ও তার কমান্ডিং অফিসারকে বন্দী করে বিদ্রোহ করেন। সৈন্যরা সে কমান্ডিং অফিসারসহ কয়েকজনকে হত্যা করে। এরপর মেজর জিয়া শহরে ও চট্টগ্রাম-ঢাকা রোডে হানাদারদের বিরুদ্ধে অভিযান না চালিয়ে চলে যান বোয়ালখালীতে। ২৬ মার্চ ভোরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার একটি বার্তা সীতাকুন্ডের সলিমপুর ওয়ারলেস কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের নেতা ও জনগণের কাছে পৌঁছে। এই বার্তাটি একই সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে ২৬ মার্চ ভোরে। ২৬ মার্চ ভোরে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান তার সাথীদের নিয়ে বোয়ালখালী যান ও সে সময়ের সবচাইতে সিনিয়র সেনা অফিসার হিসেবে মেজর জিয়াকে অনুরোধ করেন স্বাধীনতার পক্ষে সেনাদের অবস্থান জানিয়ে একটি ভাষণ দিতে। এটা তাঁরা করেছিলেন ক্যাপ্টেন রফিকের অনুরোধে। মেজর জিয়া নেতাদের অনুরোধে সম্মতি দেন ও ২৭ মার্চ বিকালে কালুরঘাট ট্র্যান্সমিশন কেন্দ্রে যান। ইতোমধ্যে ২৬ মার্চ দুপুর, বিকালে, রাতে ও ২৭ মার্চে সকালে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পাঁচ পাঁচ বার স্বাধীনতার ঘোষণা পড়া হয়ে গেছে। মেজর জিয়া পঞ্চম অধিবেশনে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। এর দুই ঘন্টা পর আবার বেতারে যান ও নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধকে সেনা বিদ্রোহ বানিয়ে ফেলেন। চট্টগ্রামের নেতারা দ্রুত তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তিনি ২৮ মার্চ ভাষণ পরিবর্তন করে আবারো বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। এরপর তিনি তাঁর সৈন্যদের নিয়ে সে সময়ে যুদ্ধের দিক থেকে একেবারেই গুরুত্বহীন একটি স্থান কালুরঘাট ব্রীজে যান ও দুর্ধর্ষ বেঙ্গল রেজিমেন্টকে বসিয়ে রেখে ভারত চলে যান। পরে আবার শুভপুর যুদ্ধে জড়িত হন। এই হলো মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর পেক্ষাপট। ’৭১ এর মার্চ প্রেক্ষাপট ও মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের আগে ৪ বার স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ হয়ে যাওয়ার পর মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা ইতিহাসের বিকৃতিই শুধু নয় সমগ্র আন্দোলনকে অস্বীকার করা নয়কি? মেজর জিয়ার ঘোষণা এসেছে ২৭ মার্চ বিকালে, সারাদেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে ২৫ মার্চ রাত থেকে ২৬ মার্চ ভোরের মাঝে। তা হলে মেজর জিয়ার ডাকে জাতি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে এই জাতীয় গল্পের ভিত কোথায়? আবার জনাব জিয়ার ঘোষণা কোন কাজে আসেনি বলে ভাবা ঠিক নয়। তাঁর ডাকে জনগণ বিশেষ করে দোদুল্যমান জনগোষ্ঠী যে অনুপ্রাণিত হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই।
আবার যুদ্ধে মেজর জিয়ার কোন অবদান ছিল না বলে যারা প্রচার করেন তারাও ইতিহাস বিকৃত করছেন। মেজর জিয়া একটি ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন এবং সে সুবাদে যুদ্ধকালীন সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং এই নিয়োগ তিনি পেয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক। তাই যুদ্ধে জিয়ার ভূমিকা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তারা যুদ্ধের সময়ের সফল বাংলাদেশে সরকারের যোগ্যতার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে ইতিহাস বিকৃতি করছেন। ইতিহাসের এইসব বিকৃতির জবাব রয়েছে এই বইয়ে। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার ও বেতারে জড়িতদের সাক্ষৎকারের উপর ভিত্তি করে রচিত এই বইটির প্রাপ্তিস্থান: ঢাকা- বলাকা প্রকাশন, স্যুট-৮, বে্িজমেন্ট, কনকর্ড ইমপোরিয়াম,, ২৫৩/২৫৪ এলিফ্যান্ড রোড, ঢাকা। টেলিফোন- ০১১৯৫০৫০৩৬৮। ডা. বিজয়-০১৮১৯৩৮৭৯০৭, ডা. ফরহাদ-০১৯৭৮১৩৪৫২০, আলম-০১৭১৬-৬৩৬৬৬৮। চট্টগ্রাম: নন্দন বইঘর, লুসাই ভবন, চেরাগী পাহাড়ের মোড়।- ০১১৯৫০৫০৩৬৮, ডা. মাহফুজ- ০১৮১৯৩৩৯২৮৬, ফাহিম-০১৯১৩৪২০৪২১। ময়মনসিংহ:
তমাল-০১৯১৫৯৭৫৭৪৭। মূল্য: মাত্র একশত টাকা।
সূত্র: লেখকের ফেসবুক থেকে।