চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান পূজাম-প জেএম সেন হল প্রাঙ্গণসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৭৬টি পূজাম-পে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপনসহ ১১ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদ। আজ ৯ অক্টোবর (শনিবার) সকালে বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য।
লিখিত বক্তব্যে হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ১৯৭১ সালের রক্তাক্ত স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত রাখা, সনাতন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ সংরক্ষণ এবং জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শাসন ব্যবস্থার প্রতিবাদের লক্ষ্যে সময়ের প্রয়োজনে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির গঠনতন্ত্র ও প্রশাসনিক কাঠামোর আলোকে গঠিত হয় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনা এ যাবৎ বারবার প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছে। স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাসহ সকল প্রকার বৈষম্য ও ও বিভেদ নীতির চির অবসান হোক-এটাই আমরা পোষণ করি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সরকারের সুনাম ক্ষুণœ করার জন্য যেকোন সময় চেষ্টা চালাতে পারে। এই ব্যাপারে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।আমরা বিগত দিনে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের নিকট আবেদন জানিয়েছিলাম, যাতে সাম্প্রদায়িক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। তারপরও আমরা লক্ষ্য করছি দেশের কিছু কিছু স্থানে মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন স্থানে জবরদখল, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরসহ ন্যাক্কারজনক ঘটনা এখনও ঘটছে। আমরা প্রত্যাশা রাখি বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকায় এবারের শারদোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদ সরকারের কাছে ১১ দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো : ১) ৭২ এর সংবিধানের আলোকে সকল সম্প্রদায়ের সমঅধিকার নিশ্চিত করা, ২) হিন্দু সম্প্রদায়ের মঠ-মন্দি, ঘরবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুটপাট, হামলা ভাঙচুরসহ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের মানবতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করা, ৩) দুর্গোৎসবকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান এবং শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা, ৪) প্রায় তিন কোটি সনাতনী সমাজের অন্যতম দুঃখ সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টিকারী বাতিলকৃত শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন কার্যকর করে অবিলম্বে প্রকৃত ভূমি মালিকদের ফেরত দেওয়া, ৫) সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ প্রশাসন ও সচিবালয়সহ সকল সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের আনুপাতিক হারে নিয়োগ, ৬) সরকারি সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, ৭) বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের অবসান করা, ৮) চট্টগ্রামের তীর্থভূমি সীতাকু-কে জাতীয় তীর্থস্থান ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দির হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা করা, ৯) সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, ১০) সীতাকু-ে শ্রীশ্রী ‘চন্দ্রনাথ ধাম’ ও কক্সবাজার ‘আদিনাথ মন্দিরে’ সরকারি সহায়তায় উন্নয়ন করার আশু ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দেবোত্তর সম্পত্তি সংক্ষণ আইন দ্রুত প্রণয়ন করা, ১১) শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন সরকার-বেসরকারি সকল প্রকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি সাধন ধর, বিমল কান্তি দে, মুক্তিযোদ্ধা অরবিন্দ পাল অরুন, অ্যাড. চন্দন তালুকদার, সহ-সভাপতি অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, সুমন দেবনাথ, রতœাকর দাশ টুনু, প্রদীপ শীল, বিপ্লব কুমার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন মল্লিক, সজল দত্ত, অ্যাড. নটু চৌধুরী, বিপ্লব সেন, অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন, সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জন দত্ত, সহ-দপ্তর সম্পাদক রিপন রায় চৌধুরী, সহ-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ সম্পাদক অমিত ঘোষ, কার্যকরি সদস্য রাহুল দত্ত, অয়ন ধর, নিঝুম পারিয়াল প্রমুখ।