চট্টগ্রাম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫:
বাংলাদেশে লবণ উৎপাদন হয় সমুদ্রের পানি থেকে। কিন্তু পটিয়ায় লবণ মিলের পরিত্যক্ত পানি থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে নতুন লবণ।
পটিয়ায় ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকায় পরিত্যক্ত লবণের পানি আর মিঠা পানির সমন্বয়ে টনে টনে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। আর এসব লবণ যাচ্ছে মাছের খামার, কৃষিকাজ, মাছ ও চামড়া সংরক্ষণসহ নানা কাজে ব্যবহারের জন্য।
সমুদ্রের লবণ ক্রাশিংয়ের পর কারখানার পরিত্যক্ত পানি জমির এক কোনায় পুকুরের মতো করে জমানো হয়, সেখানে চানঁখালী খালের মিঠা পানি আর ফিটকিরি দিয়ে পানি পাইপের মাধ্যমে সরাসরি আনা হয় জমিতে। এসব পানি সারি সারি করে রাখা পলিথিন দিয়ে গড়ে তোলা লবণ উৎপাদনের ট্রেতে রেখে ৫-৭ দিন রোদে শুকিয়ে লবণ তৈরি করা হচ্ছে। উৎপাদিত এ লবণ প্রতি কেজি ৬-৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত লবণ মাছের খামার, চামড়ার আড়ত, কৃষিকাজে ব্যবহার হচ্ছে। আর দিন দিন বাড়ছে এ ধরনের লবণ মাঠ।
লবণ ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রায় ৭-৮ বছর আগ থেকেই অল্প পরিসরে ইন্দ্রপুলের লবণ কারখানার পরিত্যক্ত পানি পুনরায় রোদে শুকিয়ে লবণ তৈরি করা হচ্ছে। এটা শুধু পটিয়াতেই হচ্ছে। দেশে আর কোথাও এভাবে লবণ উৎপাদন করার নজির নেই।
ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকার আশেপাশে যেসব কৃষি জমিতে লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদ হত না বর্তমানে সেসব পরিত্যক্ত কৃষি জমিগুলো লবণ মাঠ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। আগে কারখানার পরিত্যক্ত পানিতে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হত, কিন্তু তা এখন আর হচ্ছে না।
জানা যায়, পটিয়া ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকার এক সময়কার চাষাবাদের অনুপযোগি পরিত্যক্ত এসব জমিতে বর্তমানে ব্যবসায়ীরা লবণ চাষ করে মৌসুমে প্রায় ১০০ একর জমিতে ৮-১০ হাজার মেট্রিকটন লবন উৎপাদন করছে। তাতে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা আয় করছেন।
১৯৫২ সালের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকাটি লবণ শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে উঠে। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী চানখালী খালকে কেন্দ্র করে ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণ পরিশোধনাগার কারখানা গড়ে ওঠে। এসব কারখানায় দেশের বিভিন্ন জায়গা হতে উৎপাদিত কাঁচা লবণ পরিশোধন করে আয়োডিনযুক্ত লবণে পরিণত করা হয়। পরে তা খাবারের উপযোগি করে বাজারজাত করা হয় সারাদেশে।
ইন্দ্রপুুল লবণ শিল্প এলাকায় ৪৪টি লবণ পরিশোধন কারখানা থাকলেও বর্তমানে চালু রয়েছে ৩০টি কারখানা।
সুলতানপুরী সল্টের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক বলেন, সাগরের পানি দিয়ে কক্সবাজারে যে লবণ উৎপাদন হয় তার মধ্যে মহেশখালীর লবণের দাম বেশি। টেকনাফ ও মগনামার লবণের দাম কম। এসব এলাকার মাঠে উৎপাদিত লবণ মানভেদে ৪০-৫০ কেজির বস্তা ৬৩০-৭০০ টাকায় কিনছি আমরা। ক্রাশিংয়ের পর আয়োডিনযুক্ত লবণ ২৫ কেজি প্যাকেট করা কার্টন ৩১০-৩৩০ টাকা বিক্রি করছি।
তবে ইন্দ্রপুলের জমিতে যে লবণ হচ্ছে তা খাওয়ার উপযোগি নয় বলে জানান তিনি। সেগুলো মাছের খামার, চামড়ার আড়ত, কৃষিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
Discussion about this post