চট্টগ্রাম, ২০ মে, ২০২২:
কাপ্তাইয়ে বন্য হাতির আক্রমণ প্রতিরোধে তৈরি করা হচ্ছে সোলার ফেন্সিং। কয়েক বছর ধরে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকাসহ লোকালয়ে বন্য হাতির উপদ্রব ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্য হাতি নষ্ট করছে ফসলের ক্ষেত। বাগার, জুমের ফসল সহ কৃষকের ফলফলাদি। আক্বরমণ করছে মানুষের ঘরবাড়িতে। হাতির আক্রমণের কারণে ইতিমধ্যে জানমালের বেশ ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটেছে। কাপ্তাইয়ে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব অবসানে বনবিভাগ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় কাপ্তাইয়ে শুরু হয়েছে “সোলার ফেন্সিং” নির্মাণ কাজ।
গতকাল শুক্রবার কাপ্তাইয়ের নৌবাহিনী সড়কের পাশে গিয়ে দেখা যায়, হাতি চলাচলের পথে সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিক ও বনবিভাগের কর্মীরা। কাপ্তাই বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে এই সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজ। যা আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সোলার ফেন্সিং সিস্টেম সম্পর্কে আরো জানা যায়, এটি এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি, যা দ্বারা বন্য হাতির পাল লোকালয়ে আসতে চেষ্টা করলে সোলার ফেন্সিং এর হালকা বৈদ্যুতিক শক খেয়ে তারা ফিরে যাবে, তবে এতে হাতির প্রাণহানি ঘটবেনা।
কাপ্তাইয়ে সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজের দায়িত্ব প্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আকাশ জানান, এই সোলার ফেন্সিং নির্মাণে ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৮ শ’ টি পিলার নির্মাণ করা হবে। এর প্রতিটি পিলার মাটির নিচে ৩ ফিট এবং উপরে ৭ ফিটসহ মোট ১০ ফিট উচ্চতা হবে। বর্তমানে ৫০ টি পিলারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবং বাকি পিলারগুলোর কাজ চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।
কাপ্তাই বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার মাহমুদুল হক মুরাদ জানান, প্রাকৃতিক বন ও জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই কাপ্তাই। কাপ্তাইয়ের গভীর জঙ্গলে রয়েছে বেশ কয়েকটি বন্য হাতির পাল। অনেক সময় খাবার না পেয়ে তারা লোকালয়ে চলে আসে। এবং মানুষের ঘরবাড়ির ক্ষতিসাধন করে। তাই বনবিভাগের উদ্যোগে বন্যহাতির অভায়ারণ্যগুলো চিহ্নিত করে সেখানে বিভিন্ন কলাগাছ ও হাতির খাবার বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এই সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে বন্য হাতি লোকালয়ে আসার প্রবণতা অনেকটা কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান, ইতিমধ্যে কাপ্তাইয়ে সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে এই সোলার ফেন্সিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মনে করেন।
কাপ্তাইয়ের গ্লোবাল ভিলেজের কয়েকজন সদস্যের সাথে কথা হলে তারা জানান, হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে এই সোলার ফেন্সিংয়ের পাশাপাশি বন্য হাতির বাসস্থান কিংবা খাবার সংকট দূর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে, তাহলে সফলতা পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তারা।
১৯৯৯ সালে বন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার ভূমির উপর কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক স্থাপন করা হয়। এখানে সেগুন, গামারি, জারুল, মেহগনি সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। এছাড়া এখানে বুনো হাতি, হরিণ, বুনো বিড়ালসহ বিভিন্ন জাতের জীবজন্তু এবং নানা জাতের পাখির বিচরণ রয়েছে।
Discussion about this post