চট্টগ্রাম, ৭ জুলাই, ২০২২:
লিখতে না লিখতেই কালুরঘাট সেতু পারাপার হলাম ঝটিকা সফরে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কারণে। বোয়ালখালী- পোপাদিয়া- হাওলা। কালুরঘাট সেতু দিয়ে রেল পারাপার হওয়ার সময় দু’পাড়ের গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে হয়। এরপর একদিকের যানবাহন পার হয়ে গেলে অন্য দিকেরগুলো পার হয়। অনেক প্রাচীন ঐতিহাসিক এই সেতুতে সঙ্গতভাবেই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নেই। তাই কোন কোন সময় উভয় দিকের গাড়ি পারাপারের সংখ্যা ও সময় নির্দিষ্ট থাকে না। সে যাক, আজ(৭ জুলাই, ২০২২) আমার যাত্রাকালে তেমন কারণে খানিকটা রোদে পুড়ে গাড়িতে অপেক্ষা করতে হলেও ঐতিহ্যবাহী কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়ির মূল প্রবেশ পথ তথা তালতলা পা রাখার সাথে সাথেই চোখে পড়লো মধ্যাহ্নের ঝাঁ ঝাঁ রোদের নিস্তব্ধতায় শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রচণ্ড উত্তাপেও পুকুরগুলোর বর্ষাজনিত যৌবন টের পাওয়া গেলো। আর পাওয়া গেলো- দিগন্তে বিস্তীর্ণ নিরবতা। আহা! কোথায় চলে গেলো এইসব গ্রামে গম গম করতে থাকা মানুষগুলো। সবাই শহরে থাকেন নানা কারণে। মাঝে মাঝে গ্রামে আসেন । তাই গ্রামগুলো ফাঁকা। অথচ শৈশবে দেখেছি চট্টগ্রাম নগরীর অত্যন্ত নিকটবর্তী বোয়ালখালী থেকে বয়োজ্যোষ্ঠরা ডেইলি প্যাসেঞ্জার হয়ে আসা যাওয়া করতেন। কালুরঘাট সেতু আর সড়কের জরাজীর্ণ দশার কারণে যাতায়াতের ঝামেলা এড়াতে সবাই এখনো শহরমুখী। আমাদের একসময়কার কোলাহলমূখর বাড়িগুলোর দীর্ঘ অব্যবহারজনিত নিরবতায় বেশিক্ষণ থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার কাছে কোন স্বর্গীয় শান্তিও একা ভোগ করা অশান্তির সমান। আসলে মানুষ ছাড়া কোন সৌন্দর্যই পরিপূর্ণ নয়। সেখানে মন খারাপের মেলোডি ভাসতে থাকে সবখানে। তাই ফের সবুজেই চোখ রেখে ফিরে এলাম। আসার পথে অবশ্য সেতুতে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি।
কালুরঘাট সেতু সংক্রান্ত গতকালের পোস্টে অনেকের মন্তব্য পাঠে বুঝতে পারলাম প্রয়াত শ্রদ্ধেয় সাংসদ মাঈনুদ্দীন খান বাদল অনেকের মনে শ্রদ্ধার আসনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। আমি তাকে নিয়ে একাধিক লিখেছি। তিনি অনলবর্ষী বক্তা। মাটি আর মানুষের রাজনীতিবিদ। ব্যক্তিগতভাবে জাসদ করলেও আমৃত্যু মহিউদ্দিন চৌধুরীর অন্যতম শক্তি, সহযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধু আর তাঁর কন্যা মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর অনুরাগী ছিলেন। বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে কালুরঘাট সেতু না হলে সংসদ থেকে ইস্তফা দেয়ার ঘোষণা দেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্রয়াত হন। আমরাতো বটেই তিনিও আল্টিমেটাম দেয়ার পরে বুঝে গেছিলেন দেশের বিরাজিত বাস্তবতায় তাঁর বেধে দেয়া সময়ে সেতুটি হওয়া সম্ভব না। কিন্তু দুর্ভাগ্য সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা নেয়ার আগেই তিনি জীবন থেকে ইস্তফা নেন। মানীর মান আল্লাহ রাখেন সেই প্রবাদটিকে বিশ্বাস করলে বলা যায় যেন তিনি ভাগ্যবান বলেই শ্রষ্টা তাকে সঠিক সময়ে তুলে নিলেন। তবে একথা ঠিক তিনি যে বৈপ্লবিক আদর্শের রাজনীতিবিদ তাতে নিশ্চিত বলা যায়, সংসদ থেকে ইস্তফাই দিতেন….। কিন্তু এরপর….? আমরাতো জীবিত মানুষকে মাথায় তুলতে দেরি করিনা- মাথা থেকে ফেলতেও দেরি করিনা।
এখন অনেকেই সেতুর ব্যয় বাজেট, নামকরণ এসব নিয়ে নানা মতামত দিচ্ছেন- অভিযোগ করছেন। এসবের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে,তবে তার সময় সম্ভবত এখন নয়। কারণ রাজনৈতিক মূলা দর্শনের অতীত অভিজ্ঞতা আর নেপথ্য চক্রান্তের ফলে দ্রুত সেতুটি বাস্তবায়ন নিয়েও সংশয় এখনো রয়ে গেছে। তাই সকলের এখন একটাই আওয়াজ হওয়া উচিত দ্রুত কালুরঘাট সেতুটি বাস্তবায়ন হোক।
#লেখা ও ছবি কবি ও সাংবাদিক সৌমেন ধরের ফেসবুক থেকে নেওয়া
Discussion about this post