চট্টগ্রাম, ১৪ মার্চ, ২০২৩:
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে উঠায় ওয়াসার পানির গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। প্রায় গত তিন দশক ধরে শুষ্ক মৌসুমে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে চললেও লবণাক্ততারোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে কোনো উপায় না পেয়ে লবণাক্ত পানি পান করে নিরবে চট্টগ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের সঙ্গে সাগরের লোনা জল কর্ণফুলী ও হালদা নদী পর্যন্ত চলে আসা একই সময়ে কাপ্তাই লেকের পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা এভাবে প্রতিবছর বাড়ছে।
স্বাস্থ্য তথ্য অনুসাওে, ১ লিটার পানিতে লবণের সহনশীল মাত্রা ৬০০ মিলিগ্রাম। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে লবণের মাত্র ১৭ শ মিলিগ্রাম পর্যন্ত উঠেছে। যে কারণে ওয়াসার মোহরা প্রকল্পে দৈনিক একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানি উত্তোলন বন্ধ রাখতে হচ্ছে ওয়াসাকে।
সূত্রমতে, লবণাক্ততা বাড়ার পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় দৈনিক এক কোটি লিটার পানির উৎপাদনও কমেছে ওয়াসার। ফলে নগরীর কিছু এলাকায় পানির সংকটের কথাও শুনা যাচ্ছে। এসব পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়া গেছে।
যে কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসা লবণাক্ততা কমাতে ওয়াসা ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সাময়িক বন্ধ রাখছে। ডিপটিউবওয়েলের পানির সংমিশ্রণের মাধ্যমে লবণের মাত্রা সহনশীল করার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে কয়েক মাস আগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে বৈঠক করেছিল ওয়াসা। কাপ্তাই লেকে পানির প্রবাহিত ঠিক রাখতে পিডিবিকে চিঠিও দেয়া হয়েছিল।
লবণাক্ততা রোধের কোনো প্রযুক্তি চট্টগ্রাম ওয়াসার নেই জানিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এখন আমরা নিয়মিত পানি পরীক্ষা করি। যখনই লবণাক্ততা বেশি দেখা যায় তখন ডিপটিউবওয়েলের পানির সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। অতিরিক্ত লবণাক্ততা থাকলে তখন প্লান্ট বন্ধ রাখা হয়। তবে এখনো পর্যন্ত মোহরা প্লান্টে লবণাক্ততার আঘাত আসলেও মুদনাঘাট-পোমরা প্লান্টে সে আঘাত পড়েনি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে লবণাক্তার বিষয়টি ধরা পড়ে ১৯৯৪ সাল থেকে। ১৯৮৭ সালে হালদা তীরে মোহরা প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ শুরু করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। উৎপাদনে যাওয়ার সাত বছরের মাথায় প্লান্টটিতে লবণপানি আঘাত শুরু করে। এরপর থেকে প্রতিবছর পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিলে সেটার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করে আসছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। জোয়ারের সময় পানির উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ওয়াসা। তাছাড়া বিকল্প হিসাবে টিউবওয়েলের পানির সংমিশ্রণ ঘটানোর মাধ্যমে সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করে ওয়াসা।
মুলত নদীগুলোতে পানির স্তর নিচে নেমে গেলে লবণাক্ততার মাত্রা বাড়ে। যা শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ হয়ে উঠে। পানির এই লবণাক্ততা দূর করার কোনো প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি চট্টগ্রাম ওয়াসার নেই বলে জানিয়েছে ওয়াসার কর্মকর্তারা।