চট্টগ্রাম, ২২ মার্চ ২০২৩:
সাতকানিয়ায় বালুমহাল ইজারা বন্ধের এক বছর পার না হতেই জনমত উপেক্ষা করে পুনরায় ইজারা আহ্বান করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতঘর নদী গর্ভে বিলীনের আশঙ্কায় আবারও অতীতের ন্যায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়। এলাকাবাসীর পক্ষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এক মুক্তিযোদ্ধা- আওয়ামী লীগ নেতা আলাদাভাবে এ আবেদন করেন। এলাকাবাসীকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এ ইজারা দ্রুত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আতংকিত ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। স্থানীয় সংসদ সদস্যও ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসককে সুপারিশ করেছেন।
নলুয়া ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. লেয়াকত আলীর ডলু নদীর ৪ নং বালি মহাল ইজারা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদনে সুপারিশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন- ইতোপূর্বে ডলু নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের শত শত বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলনের ফলে বন্যার পানির তোড়ে নদীর পাড় ভেঙে ফসলি ও কৃষি জমি নষ্ট হয়ে নিঃস্ব হবে অনেক পরিবার। বর্তমান সরকার ডলু নদীর ভাঙনরোধে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ ধ্বংস ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প অকেজো হওয়ার আশংকা রয়েছে। বালু মহাল দখল-বেদখল, উত্তোলন ও বিক্রি নিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক দ্রব্যের বিস্তার ও খুন-খারাবি সৃষ্টির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটবে। অতীতে এমন ঘটনার অনেক নজির রয়েছে।
অপরদিকে, নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়াও জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দিয়েছেন।
চেয়ারম্যানের মতো প্রায় একই অভিযোগ দায়ের করে বালু মহাল-৪ এর ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ করে এলাকার জনগণকে উল্লিখিত সমস্যাসমূহ থেকে পরিত্রাণে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আহমদ মিয়া বলেন, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে যদি কেউ হঠকারি সিদ্ধান্ত নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নালিশ করব। বন্ধ বালু মহাল আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ ও তাদের বিভিন্ন অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে ডলু নদীর ৩ ও ৪ নং বালু মহাল ইজারার কারণে নদীর দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে অনেকের বসত ভিটে ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অসংখ্য পরিবার একমাত্র সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বালুমহাল দখল-বেদখল নিয়ে অনেক সময় ঘটে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। এতে অনেকেই গোলাগুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪ নং বালুমহালের ইজারা বাতিল করে। ওই সময় ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা নদভীর প্রচেষ্টায় জেলা প্রশাসন বালুমহাল দুটির ইজারা স্থগিত করে। কিন্তু হঠাৎ এ বছর জেলা প্রশাসন ডলু নদীর বালুমহাল-৪ ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যান্য বালুমহালের সঙ্গে। তবে ৩ নং বালু মহালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি এবার প্রকাশ করা হয়নি।
তাদের অভিযোগ, ৪ নং বালুমহাল ইজারা নেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র তৎপর। তারা দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে। তাদের ভয়ে প্রতিবাদ করার কেউ সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধাচারণ করলেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এর ফলে নদীর দুপাড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এলাকাবাসীর বাড়ি ঘর রক্ষায় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে এটিও ঝুঁকির মুখে। এবার ডলু নদীর বালুমহাল-৪ ইজারা দেওয়া হলে ভাঙনে এটিও বিলীন হতে পারে- এমন আশংকা স্থানীয়দের। তারা মনে করেন, উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত না করেই প্রভাবশালীদের চাপ কিংবা অর্থের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। না হয় গণবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নিতে পারে না প্রশাসন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ করিম বলেন, আমরা অনেক বালুমহালের ইজারা বন্ধ রেখেছি। জেলা প্রশাসন কোন বালুমহাল ইজারা দেবে, কোন মহাল ইজারা দিবে না তা ঠিক করে না। উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইজারা প্রক্রিয়া শুরু এবং সম্পন্ন করে। তবু বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আপত্তি উঠেছে তা আমাদের বিবেচনায় থাকবে।
Discussion about this post