চট্টগ্রাম, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩:
মুসলিম সমাজে ঈদ উদযাপন বিরাট একটি সংস্কৃতির অংশ। পবিত্র রমজান মাসের এক মাস সিয়াম সাধনার শেষে ঈদ নামক খুশিই হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। যারা রমজানের রোজা পালন করবেন, তাদের জন্য মহান আল্লাহ প্রদত্ত খুশিই হলো পবিত্র ঈদ। ঈদ অর্থ খুশি ও আনন্দ। মুসলমানদের ঘরে ঘরে পাড়া মহল্লায়, সমাজে সম্মিলিতভাবে পবিত্র ঈদ পালিত হয়। ঈদের আনন্দ পালিত হোক ঘরে ঘরে। আবহমান কাল থেকে মুসলমানদের ঘরে ঘরে ঈদুল ফিতরের খুশি উদযাপিত হয়ে আসছে। এই আনন্দ মুসলিম বিশ্বের ঘরে ঘরে পালিত হয়। ধনি-গরিব সকলের মাঝে ঈদের আনন্দ অপূর্বভাবে লক্ষ্য করা যায়। মুসলিমদের ঘরে ঘরে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যগরিষ্ট দেশ। এখানে ঈদের আনন্দটা দেখার মতো।
ঈদকে সামনে রেখে সাধ্যমতো নতুন জামা কাপড় ক্রয় করা হয়। নিজের জন্য পরিবার, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীর জন্য সাধ্যমতো নতুন কাপড় চোপড় ক্রয় করার মধ্যে ঈদ আনন্দ উপভোগ করা হয়। ঈদকে সামনে রেখে সরকারি বেসরকারি মুসলিম জনগণ ঘরবাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। নিকটাত্মীয়দের জন্য বাজার করা ইতিমধ্যে চলমান আছে। মার্কেট দোকান সব খানেই উপছেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ঈদ আনন্দ ছোটদের মধ্যে একরকম, বড়দের মধ্যে অন্যরকম। ছোটরা দুই ঈদের আনন্দ ভিন্নভাবে পালন করে থাকে। ঈদুল ফিতরের আনন্দ নতুন জামা কাপড় পরিধান করে পালন করে থাকে। আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, প্রতিবেশির মহল্লায় মহল্লায়, ফিন্নি সেমাই নানা প্রকারের বাহারি আপ্যায়নে আনন্দকে উপভোগ করে। সাপ্তাহ পর্যন্ত এই আনন্দ তাদের মধ্যে চলতে থাকে ।
সরগরম মার্কেট বাজার, সব পক্ষের মধ্যে বাড়তি মূল্য চাইতে দেখা যাচ্ছে। দোকানদাররা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে মূল্য চাইতে দেখা যাচ্ছে। দোকানদাররা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে মূল্য হাতাচ্ছে। কাপড় চোপড়ের দোকানে কোনো ন্যায্যমূল্যর দেখা মিলছেনা। যা ইচ্ছে দাম হাতিয়ে নিচ্ছে। দোকানির নিকট ক্রেতারা অসহায়। নতুন কাপড় চোপড়ের বাস্তব মূল্য কী সেটি ক্রেতা সাধারণ বুঝতে পারছেনা। দ্রব্যেমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব জিনিসপত্রের সাথে কাপড় চোপড়ের মূল্য অনেকভাবে বেড়ে গেছে। তবুও যাদের সামর্থ্য আছে নতুন জামা কাপড় চাই। পরিবার সন্তানদের জন্য নতুন কাপড় কিনতেই হবে। এটা ঈদ আনন্দ ঈদের একটি খুশি। নতুন কাপড় পরে আত্মীয়স্বজনদের সাথে খুশির ভাগাভাগি করতে হবে। আবহমান কাল থেকে মুসলিম দুনিয়ায় ঈদের খুশি চলে আসছে। ধনি, গরিব , এতিম , মিসকিন , ফকির সকলেই সম্মিলিতভাবে সামর্থ্যের মধ্যে ঈদুল ফিতর নামক খুশির দিন উদযাপন করে। ঘরে ঘরে আনন্দ- সেমাই সিন্নি, পোলাও বিরানির মু-মু গন্ধের বাহারি ধরনের খানার আয়োজন প্রস্তুত হয়। একে অপরের সাথে কৌশল, মোলাকাত সালাম বিনিময় করে।
ঈদুল ফিতরের সময় নতুন জামা কাপড় টাকা পয়সা দিয়ে গরিব আত্মীয়-^জনের খবর নেয়া হয়। আত্মীয়-স্বজন, গরিব, এতিম , মিসকিনদের মধ্যে বন্টন করা হয়। সবাই মিলে আনন্দে এবং স্বাচ্ছন্দের মধ্যে একে অপরের সাথে মিলে মিশে ঈদ আনন্দ উদযাপিত হয়।
একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করে। পুরো বছর কেউ কারো সাথে দেখা না হলেও কমপক্ষে ঈদের দিন হলেও একে অপরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়। সালাম বিনিময় করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ বাস্তবে ধর্মপরায়ণ। যার যার ধর্ম সে পালন করে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের মধ্যে সকল ধর্মের মানুষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আদায় করে। এদেশে ধর্মপালন ও রক্ষণাবেক্ষণে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রনোদনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব ধর্মের অনুসারিদের জন্য সরকারের পক্ষে হতে সাধ্যমতো বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দুর্বল শ্রেণীর মানুষগুলোকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ঈদ, পূজা খুশির দিনের জন্য সাহায্য করা হয়। বলা যায় অত্যন্ত আন্তরিক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সব ধর্মের আনন্দ-উৎসব নিরাপত্তার মধ্যে পালিত হয়। কেউই কারো ধর্মীয় উৎসবের দিনে হাঙ্গামা-বিশৃংখলায় জড়ায়না। আইনশৃংখলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ধর্মীয় উৎসবে সাহায্য করে। ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে আন্তধর্মীয় সৌহার্দ্য দেখতে পাওয়া যায়। দেশের ধর্মীয় মানুষগুলো একে অন্যের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। যথেষ্ঠ মিল মোহাব্বত, ভালোবাসা এদেশের পাড়া মহল্লায় বিরাজমান আছে। আমাদের ধর্মীয় কালচার, আচার অনুষ্ঠানের সব ধর্মের মানুষ আনন্দচিত্তে পালন করছে। এতে দেশের মানুষ খুবই খুশি। ধর্মীয় দিবসে বাঙালি জাতি একত্রে মিলিত হয়ে যায়। আনন্দ ভাগাভাগি করে। ধর্মপালনে দেশের মানুষকে ঐক্য, শৃংখলা থেকে দুরে নিয়ে যায়নি। আমাদের মধ্যে ধর্মীয় মিলন সংলাপ ভালোবাসা চলমান রয়েছে। এটা বাংলাদেশে থাকবে। ধর্মীয় উগ্রবাদি মনোভাব এ জাতি মনে প্রাণে পোষণ করেনা। নামাজ, পূজা, প্রার্থনা সবকিছু থাকবে। যার যার ধর্ম তিনি অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালন করবে। সেখানে কোনো ধরনের কারো আপত্তি থাকার কারণ নেই। ধর্মপালন হবে। আমাদের মধ্যে শান্তিশৃংখলা অক্ষুণœ থাকবে। পরস্পর পরস্পর আন্তরিক ও মানবিকতা বজায় থাকবে। ধর্মের মূলবাণী আর ঈদের খুশি ঐক্যবদ্ধ ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে। সৃষ্টির মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং জাতীয়ভাবে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা। ধর্ম যেন আমাদেরকে ঐক্য বিনষ্ট করতে না পারে সেদিকে যতœবান হতে হবে। সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ধর্মের নামে যেনো বিশৃংখলা ও ধর্ম, নীতি নৈতিকতা পরিপন্থী কাজ না করি। ধর্মের শান্তি ঐক্য শৃংখলা রক্ষা করি।
আমাদের দেশের অর্থনীতির গতিকে আরো সচল করার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। সেটি দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। সংঘাতময় পরিস্থিতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। জনগণের স্বার্থে সরকার ও বিরোধী দলকে সমঝোতার পথ খুঁজতে হবে। সংঘাতের মাধ্যমে জনশান্তি শৃংখলা কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব হবেনা। এবারের ঈদ আনন্দ খুশি মুসলিম সমাজে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ঈদের খুশিকে জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হলে মানবিক মানুষদেরকে এ কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। সাহায্য, জাকাত, প্রণোদনা অভাবি গরিব দুস্থদের জন্য প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। মিতব্যয়ী হতে হবে। পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত খরচের বেলায় সাবধানতা হতে হবে। রাষ্ট্রের উচিত আগে জনগণকে বাঁচানো। অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রজেক্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বন্ধ রাখতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের সরকারি খরচে মিতব্যয়ী হওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সরকারকে জনগণের জীবন যাপন সহজ ও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে নিয়মিতভাবে মনিটরিং ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ঈদের আনন্দ সেকাল আর আজকের দিনের মধ্যে অনেকভাবে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আয়-ব্যায় ও মানবিক চিন্তা-চেতনার অভাবে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা হ্রাস পাচ্ছে। ভালোবাসা আনন্দের মধ্যে ও এর প্রভাব আছে। আসুন আমরা ঈদ সহ সবধরনের জাতীয় দিবসে পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত আনন্দ উৎসব ভাগাভাগি করে উদযাপন করি।
মাহমুুদুল হক আনসারী: সংগঠক,গবেষক,কলামনিস্ট