চট্টগ্রাম,২১ আগস্ট, ২০২৪:
কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলে ফটিকছড়ির বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে । উপজেলার অনেক বীজতলাসহ ডুবে গেছে বহু গ্রামীণ রাস্তাঘাট, মৎস্য খামার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার । বন্যাদুর্গত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বন্যার পানিতৈ হারুয়ালছড়িতে একটি ডলফিন ধরা পড়েছে বলেও জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বর্ষণের কারণে হালদা নদী ও ধুরুং, লেলাং, মানাইছড়ি, কুতুবছড়ি, বারমাসিয়া, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি, গজারিয়া, শোভনছড়ি, রক্তছড়ি , সর্তা ও তেলপারাই খালের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লোকালয় প্লাবিত করেছে। বিশেষ করে উপজলার দাঁতমারা, নারায়নহাট, ভূজপুর, পাইদং, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল, রোসাংগিরী, নানুপুর, লেলাং, বক্তপুর, ধর্মপুর, সমিতিরহাট, জাফতনগর, ও সুন্দরপুর ইউনিয়নের একাদিক এলাকা পানিতে নিমজ্জিত । এছাড়া ফটিকছড়ি পৌরসভা ও নাজিরহাট পৌরসভার কয়েকটি বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাজিরহাট পৌরসভার ২নং ওর্য়াডের ভাঙা দিঘির পাড় এলাকায় মাওলানা আব্দুল মান্নানের ঘর হালদা গর্ভে বিলীন হবার উপক্রম হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা জুড়ে কৃষকের আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে কার্পেটিং সড়ক, ব্রিক সলিন সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাগুলো । ফলে আতঙ্কের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ বন্যা কমার অপেক্ষায় আছে।
তবে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য এলাকায় অনুপস্থিত থাকায় সৃষ্ট বন্যা মোকাবেলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
তবে ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট আতাউল্লাহ পাড়া হালদা নদীর পাড়ে বানবাসী ও ফটিকছড়ি পৌরসভার ধুরুং খাল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর। তিনি ফটিকছড়িকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান প্রশাসনকে। সাথে বানবাসীর পাশে থাকার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানান এ বিএনপি নেতা।
প্লাবিত এলাকার মৎসচাষীরা বলেন, প্রবলবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে শত শত মৎস্য প্রজেক্টের ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা।
কোনো কোনো এলাকায় বন্যাদুর্গতদের স্থানীয়রা সার্মথ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করছে বলে জানা গেছে।
হারুয়ালছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, আমার এলাকায় বন্যার পানিতে গ্রামীনসড়কসহ আমান ধানের বীজ তলা তলিয়ে গেছে। প্রায় ৫শত পরিবার পানিবন্দি। রয়েছে ।
পাইন্দং ইউপি চেয়ারম্যান একেএম সরোয়ার হোসেন বলেন, বন্যায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কৃষি জমি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
লেলাং ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দীন চৌধুরী শাহিন বলেন, তার এলাকার মানুষ পানিবন্দি। কৃষি জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
নানপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুন নবী রোশন জানান, বানবাসীদের পাশে তার নিজ তহবিল থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন । তার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
খিরাম ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন সৌরব জানান, যারা পাহাড়ি এলাকার পাদদেশে বসবাস করছে তাদের আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে।
জাফাতনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দীন বলেন, টানা বৃষ্টিতে মোহাম্মদ তকিরহাট টু সমিতিরহাট সড়ক পানিতে নিমজ্জিত। কৃষি জমিতে আমানের চারা (ধান) পানিতে ডুবে গেছে।
বক্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুল আজম বলেন, ‘ভারী বর্ষন ও সত্তা খালের পানিতে আমার ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯ ওয়ার্ডের প্রায় ৩০টি বাড়ির মানুষ পানিবন্দি । আমি ইউএনও এর সাথে কথা বলেছি সহযোগিতার জন্য।
সমিতিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, পাহাড়ি ঢল ও তেলইপাড়া খালের ভাঙ্গনে আজাদী বাজার, নানুপুর বাজার, তকিরহাটে যাওয়ার জন্য যে সড়কগুলো আছে সবগুলো পানিতে ডুবে গেছে। কৃষি জমি ও অনেক মৎস প্রজক্টের মাছ ভেসে গেছে।
বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করার তথ্য জানিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কয়েকটি স্থানে ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে । প্রায় ৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়ণ কেন্দ্র ঘোষণা করে খুলে দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক টিম গঠন করা হয়েছে। গঠিত দলগুলো মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন । ইতিমধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
Discussion about this post