চট্টগ্রাম, ৩১ মে, ২০২২ঃ
পরিবেশ ধ্বংসাত্মক জীবাশ্ম জ্বালানিতে “সুমিতম মিতসুবিসি ফাইনেন্সিয়াল গ্রুপ (এসএমবিসি)”জাপান এর বিনিয়োগ বন্ধের দাবি জানিয়েছে ক্যাব চট্টগ্রাম এবং আইএসডিই বাংলাদেশ। আজ ৩১ মে, মঙ্গলবার চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে ক্যাব চট্টগ্রাম এবং আইএসডিই বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এই দাবি জানায়।
মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, জাপান পৃথিবীর সব থেকে ধনী এবং বাংলাদেশে বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর অন্যতম। ১৯৯২ সালের জলবায়ু-সনদ অনুসারে জাপান শুধু নিজের দেশে নয় বরং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেরও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে নীতিগতভাবে বাধ্য। কিন্তু জাপান সরকার ও সরকারের প্রতিষ্ঠান জাইকা এবং সুমিতম মিতসুবিসি এলএনজি ও কয়লা-বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করে আমাদেরকে যেমন বিপদে ফেলছে তেমনি মানবজাতির ক্ষতি করছে। এতে লাভ হচ্ছে জাপানের, কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের ও পৃথিবীর। ২০৫০ নেট-জিরো বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি যাতে ১.৫º সেলসিয়াসের নিচে থাকে তার জন্যে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার জন্য জাপানের বিনিয়োগ কৌশল যথেষ্ট সহায়ক নয়।
সমাবেশে বাংলাদেশ বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লজিইডি) এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, সুমিতম মিতসুবিসি ফাইনেন্সিয়াল গ্রুপ (এসএমবিসি)-জাপান-এর বর্তমানে বাংলাদেশে দুটি বিনিয়োগ রয়েছে একটি সামিট গাজীপুর, ফেজ-২, ৩০০ মে.ও. এইচএফও ভিত্তিক বিদ্যুৎ কোম্পানি (৩ বিলিয়ন ইউএসডি) এবং ২য়টি রিলায়েন্স মেঘনাঘাট, ৭৫০ মে.ও. এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কোম্পানি (১২৬৫ মিলিয়ন ইউএসডি)। যা প্যারিস চুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ুু লক্ষ্যমাত্রা স্থাপনের জন্য সুমিতম মিতসুবিসি ফাইনেন্সিয়াল গ্রুপ (এসএমবিসি) এই বিনিয়োগ কাম্য নয়। বাংলাদেশে এসএমবিসি’র এ বিনিয়োগ বন্ধের এই দাবিটি বিডাব্লজিইডি এর সদস্য সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে করে আসলেও জাপান এখনো তাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, এখন আমরা পরিবেশ নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে আছি। আমরা এসএমবিসি’র শেয়ারহোল্ডারদেরকে আহ্বান কর- এখুনি সব গ্যাস, কয়লা, এবং তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিন। বিশ্ব আপনাদেরকে দেখছে। আমরা এখন কোন নতুন জীবাশ্ম জ্বালানির প্রকল্প নিতে পারি না এবং বর্তমানে সকল চলমান প্রকল্পগুলোকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে যদি আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সম্ভাব্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে দেখতে চাই।
আইএসডিই বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামাতে হলে পৃথিবীর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের সব থেকে বড় কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। এই সময়সীমার মধ্যে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের হাতে আর সময় নেই। তাই, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (IEA)-এর সুপারিশ অনুসারে এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবশ্যই জাপানকে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করার অঙ্গিকার ও তার বাস্তবসম্মত প্রতিফলন দেখাতে হবে।
বক্তারা অবিলম্বে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জলবায়ু-বিপদাপন্নদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করা, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য জাপানকে উদ্যোগ নেয়ার জোর আহ্বান জানান।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন।
ক্যাব বিভাগীয় সংগঠক জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন- ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, কলামিস্ট মোহাম্মদ মুসা খান, ক্যাব পাঁচলাইশের সাধারণ সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ব্র্যাক চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্যাহ চৌধুরী, প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুুরী জসিমুল হক, ক্যাব যুব গ্রুপের এম এ হানিফ নোমান, সাকিলুর রহমান, শাহরিয়ার আলম, তৌসিফ, সিএসডিএফ’র শাম্পা কে নাহার, আইএসডিই’র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, আরিফুল ইসলাম, উম্মে রুমানা আকতার, আফিফা তাবাসুম অন্তরা প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি
Discussion about this post