চট্টগ্রাম, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
বাংলাদেশ মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উপগ্রহটি তৈরি করেছে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস। কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে প্রয়োজন হয় রকেট। তেমনই রকেট তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আল রহমান। ২৮ বছর বয়সে এই মেধাবী তরুণ তৈরি করেন বাংলাদেশের প্রথম রকেট। একটা নয় তিনি চার চারটা রকেট তৈরি করেছেন। ধূমকেতু-১ ও ধূমকেতু-২ নামের চারটি রকেট। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে তার এই সফলতা। তাদের আশা সরকারের সহযোগিতা পেলে মহাকাশে পরীক্ষামূলকভাবে এই রকেট উৎক্ষেপণ করবেন।
২০১৮ সাল থেকে শুরু। শুরুতে ছিলে ৬ থেকে ৭ জন। ২০১২ সালে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম সেমিস্টার থেকেই কয়েকজন বন্ধু মিলে রকেট তৈরি করার উদ্যোগ নেন তারা। শুরুতে টাকার সঙ্কট থাকায় রকেট তৈরির কাজ বন্ধ রাখেন। পরে কয়েকজন চাকরিতে যোগ দেন টাকার জন্য। কেবল নাহিয়ান চাকরিতে যোগ না দিয়ে রকেট তৈরি কাজে লেগে থাকেন। এমনকি ব্যবসার নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে রকেট তৈরির কাজে ব্যবহার করেন। টিউশনি করেন। শিক্ষার্থীদের কাছ টাকাও তোলা হয়েছে।
নাহিয়ান বলেন, রকেট তৈরির কথা শুনে প্রথম দিকে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষকরা ভয় পেয়েছেন, ভয়ের কারণে এ ধরনের প্রযুক্তি তৈরিতে সাহস দিতে পারেননি। এখন শিক্ষকসহ সবার সহযোগিতা ও উৎসাহ পাওয়া যাচ্ছে।
২০১৮ সাল থেকে মূলত রকেট তৈরির কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ২০২২ সাল পর্যন্ত চার বছর লেগেছে। নাহিয়ান বলেন, ছোটবেলায় টেলিভিশনে রকেট ওড়ানোর দৃশ্য দেখে মনের মধ্যে ইচ্ছে জাগে, রকেট আমরাও তৈরি করতে পারব। সেই ইচ্ছে থেকে শুরু।
ধূমকেতু-১ লম্বা ৮ ফুট করে দুটি মিলে ১৬ ফুট লম্বা। আর ধূমকেতু-২ প্রতিটি ৬ ফিট করে, দুটি মিলে ১২ ফিট লম্বা রকেট। টু এর ফোর্স ৪০০ নিউটন। এটির রেঞ্জ প্রায় ৫০ কিলোমিটার। আর আয়তনের দিক থেকে বড় রকেট ৬ ইঞ্চি এবং ছোটটি ৪ ইঞ্চি। রকেটগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে তৈরি প্রথম ওয়েদার রিসার্চ রকেট (সাউন্ডিং রকেট)। আকাশে উড্ডয়ন করার পর আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণার কাজে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে এসব রকেট।
মো. নাহিয়ান আল রহমান ওরফে ওলি। তিনি ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ইলেক্টিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্টনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (ইইই) শিক্ষার্থী। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। গাইবান্ধায় সুন্দরগঞ্জের আবদুল মজিদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেছেন। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে।
তিনি জানান, তার এই রকেট উৎক্ষেপণের জন্য এখন অনুমতি প্রয়োজন। প্রয়োজন অর্থনৈতিক সহযোগিতা। এজন্য তিনি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছেন। এতে তার স্বপ্ন পূরণ হবে। আর বাংলাদেশের মহাকাশে বিচরণের ইতিহাস অনেক উচ্চতায় উঠে যাবে।
Discussion about this post